পূর্ব্ববঙ্গ-গীতিকা (দ্বিতীয় খণ্ড, দ্বিতীয় সংখ্যা)

উইকিসংকলন থেকে
একাধিক লেখক
পূর্ব্ববঙ্গ-গীতিকা
দীনেশচন্দ্র সেন সম্পাদিত

পূর্ব্ববঙ্গ-গীতিকা

[ রামতনু লাহিড়ী ফেলোসিপ বক্তৃতা, ১৯২৪-২৬ ]

দ্বিতীয় খণ্ড, দ্বিতীয় সংখ্যা

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্য, বঙ্গসাহিত্যের অধ্যাপক এবং প্রধান

পরীক্ষক ও “বঙ্গভাষা ও সাহিত্য,” “রামায়নী কথা,” “হিষ্টরি

অব বেঙ্গলী ল্যাঙ্গুয়েজ এ্যাণ্ড লিটারেচার” প্রভৃতি

বিবিধ বাঙ্গালা ও ইংরাজী গ্রন্থ প্রণেতা

রায় বাহাদুর শ্রীদীনেশচন্দ্র সেন, বি.এ., ডি. লিট্.,

কর্ত্তৃক সঙ্কলিত

কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্ত্তৃক প্রকাশিত

১৯২৬

PRINTED BY BHUPENDRALAL BANERJEE

AT THE UNIVERSITY PRESS, SENETE HOUSE, CALCUTTA.

Reg. No. 155B, July, 1926―Gyy

যাঁহারা বাঙ্গালা দেশকে ভালবাসেন, তাঁহাদের

কর-কমলে

বিষয় সূচী

কাব্যের নাম
পত্রাঙ্ক
১।
২। ২৯
৩। ৭৯
৪।
   
১২১
৫।
   
১৩১
৬।
   
১৩৯
৭। ২০৯
৮। ২৩১
৯। ২৭৫
১০। ৩১১
১১। ৩২১
১২। ৩৪৭
১৩। ৩৯১
১৪। ৪৩৩

চিত্র-সূচী

 নাম
পত্রাঙ্ক
১।
ইশা খাঁর নামাঙ্কিত কামান
  
(ভূমিকা) ৫৩
২।
ইশা খাঁর অব্যবহিত পরবর্ত্তী বংশধরগণের মসজিদ ও আবাসস্থানের ধবংসাবশেষ
  
 ৫৪
৩।
লক্ষ্মণ হাজরার রাজধানী (জলাশয়ে পরিবর্ত্তিত)
  
 ৫৪
৪।
ইশা খাঁর কামান
  
 ৫৬
৫।
শের শাহের কামান
  
 ৫৬
৬।
ধোপার পাট
  
৭।
মইষাল বন্ধু
  
৩৯
৮।
কাঞ্চণমালা
  
৯৩
৯।
শান্তি
  
১২৩
১০।
রাণী কমলা
  
২১৪
১১।
ইশা খাঁর নৌকা হইতে রাজকুমারীকে অবলোকন
  
৩৭০
১২।
কেদার রায় ও তাহার ভ্রাতুষ্পুত্রদ্ধয়
  
৩৭৬
১৩।
শোকাকুলা মাতা ও বীর করিমুল্লা
  
৩৮০
১৪-২১।
আট খানি জাহাজ ও নৌকার চিত্র
  
৪৭৮

সাধারণ মন্তব্য

 এই পল্লীগীতিকাগুলির ঐতিহাসিক ও কবিত্বমূলক যথেষ্ট মূল্য আছে। কিন্তু তাহা ছাড়া আর একটা দিক্ দিয়া ইহারা বঙ্গ সাহিত্যের একটা যুগনির্দ্দেশ করিতেছে। আমি তৎসম্বন্ধে কয়েকটি কথা বলিব।

 হরিদ্বারে যাইয়া যেরূপ গোমুখীর শত শত ধারা কিরূপে বিশালতোয়া গঙ্গায় পরিণত হইয়াছে, দেখিতে পাওয়া যায়, এই গীতিগুলিতেও সেইরূপ নানা বেগশীল স্বচ্ছধারা প্রবাহিত হইয়াছে, উত্তর কালে সেই ধারাগুলি বঙ্গসাহিত্যকে বিশেষ পুষ্টি ও বিশালতা দান করিয়াছে।

 বিশেষ করিয়া আমরা এখানে এই গীতিগুলির সহিত গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্ম্ম ও বৈষ্ণব গীতি-সাহিত্যের সম্বন্ধের কথা বলিব।

 খ্রীঃ পূঃ তৃতীয় শতাব্দীতে বৌদ্ধদিগের “একাভিপ্পায়”-সম্প্রদায়ের উল্লেখ দৃষ্ট হয়। ইহাতে যৌনসম্বন্ধ ধর্ম্মের ভিত্তিতে পরিণত করিবার প্রচেষ্টা হইয়াছিল। বৃহদারণ্যক উপনিষৎ হইতে আরম্ভ করিয়া নানাবিধ পুরাণেও যৌন-সম্পর্কের আনন্দের সঙ্গে বারংবার ব্রহ্মানন্দ উপমিত হইয়াছে। এই সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইঙ্গিত দ্বারা আমরা বঙ্গের ‘সহজিয়া ধর্ম্মে’র মূল কোথায়, তাহার আভাস পাই।

 চণ্ডীদাসের কবিতাপাঠে জানা যায়, তাঁহার সময়ে সহজ সাধনা তরুণতরুণীদের একটা বিশেষ আচরিত পন্থায় পরিণত হইয়াছিল। চণ্ডীদাস এই তরুণসাধকদিগকে ভয় দেখাইয়া নিরস্ত করিয়াছিলেন। এই পথে সিদ্ধিলাভের সম্ভাবনা প্রায় আকাশকুসুমবৎ—‘কোটিকে গোটিক হয়,” এই আশঙ্কার কথা বলিয়া তিনি নবীন যাত্রীদিগকে এই পথ হইতে ফিরিয়া যাইতে উপদেশ দিয়াছেন। এ পথে কাহারা যাইবেন? এই প্রশ্ন করিয়া চণ্ডীদাস উত্তরে বলিয়াছেন, যে ব্যক্তি সুমেরু-শৃঙ্গকে মাকড়সার জাল দিয়া বাঁধিতে পারিবেন, যিনি সাপের মুখে ভেককে নাচাইয়া অক্ষত দেহে তাহাকে ফিরাইয়া আনিতে পারিবেন, তিনি এই পথে যাউন, অপরে নহে। এ বড় দুর্গম পন্থা, দেহকে সম্পূর্ণরূপে ইন্দ্রিয়প্রভাব বিরহিত “শুষ্ক কাষ্ঠের” মত করিতে হইবে। চণ্ডীদাসের ভাষায় জলের মধ্যে আশীর্ষ ডুবিয়া স্নান করিতে হইবে, অথচ গাত্র ভিজিবে না। এই অসম্ভব ব্রত যিনি পালন করিতে পারিবেন, তিনি আসুন, অপরে নহে। অপরে চেষ্টা করিলে সে চেষ্টা “শিবনৃত্যের” অনুকরণে “ভূতের নাচের” মত হাস্যাস্পদ হইবে। অথচ তিনি বলিতেছেন, তাঁহার সময়ে না জানিয়া না শুনিয়া, “সহজ সহজ সবাই কহয়”—শত শত তরুণ-তরুণী এই পথের পথিক হইতে প্রয়াস পাইতেছিলেন। সেই সময়ে একদিকে সহজ-সাধন, অপর দিকে প্রাক্ বৌদ্ধযুগের নিবৃত্তিধর্ম্মের প্রতিক্রিয়ার ফলে নরনারীর অবাধ মিলন—বঙ্গ সমাজে এই দুইটি স্রোত বহিতেছিল। এই পল্লীগানগুলিতে দৃষ্ট হয়, বাঙ্গালীর রমণীরা প্রেমকে একটা খেলার বস্তু বলিয়া গ্রহণ করেন নাই। সহজিয়াদের মত তাঁহারা ইহাকে ধর্ম্ম বলিয়া গ্রহণ না করিলেও এই বিষয়ে যে তাঁহাদের যথেষ্ট সাধনা ছিল, তাহা গীতিকার পাঠকমাত্রেই বুঝিতে পারিবেন। এই প্রেম দুর্ব্বল-হৃদয়ে নারী প্রমত্ত কুঞ্জরের বল দিয়াছে। ইহা “একটুকু হাসি,” “একটুকু স্পর্শ,” এবং “একটুকু চুম্বন” নহে। ইহার প্রতি অধ্যায়ে সুকঠিন তপস্থ্যা। পল্লী গীতিকার এই খণ্ডে “মহিষাল বন্ধু,” “ধোপার পাঠ” ও “কাঞ্চনমালা” পাঠ করুন; প্রথম খণ্ডে “কাজলরেখা,” “মহুয়া,” “চন্দ্রাবতী,” “মদিনা” প্রভৃতি অনেক নারীচরিত্র সম্বন্ধই পাঠক অবহিত আছেন। এই রমণীদের প্রেমে স্বর্গ ও মর্ত্ত্যের মিলন সূচিত হইয়াছে; ইহারা প্রেমের জগতে সাধনার পথ ধরিয়া চলিয়াছেন। যে সাধনা ঋষি মুনিরা করিয়া থাকেন, পঞ্চাগ্নির মধ্যে বসিয়া সূর্য্যের প্রতি বদ্ধলক্ষ্য পঞ্চতপাঃ যে সাধনা করিয়া থাকেন, বাহিরের আড়ম্বর না থাকিলেও এই প্রেম তেমনই একটা নীরব সাধনা। এই প্রেম আত্মসুখাভিলাষী নহে, ইহা আত্মবলিদানেই সার্থক। যত তান্ত্রিক, যত যোগী, এদেশে যে সাধনা করিয়াছেন—শবের উপর বসিয়া কিংবা ছিন্নমস্তার ন্যায় নিজের অঙ্গ বলি দিয়া যে তপস্যায় সিদ্ধিলাভ হইয়াছে, সে সমস্ত সাধনাকে— বজ্রাসন, পদ্মাসন, শবাসন প্রভৃতি সমস্ত আসনকে—হার মানাইয়াছে, এই কন্দর্পের কোমল আসন। ইহার বাহিরে পুষ্পরেণু ও নবনীতের কোমলতা, কিন্তু ইহা বজ্রগর্ভ। বাঙ্গালী জাতি, বিশেষ বাঙ্গালী নারী যে অপূর্ব্ব প্রেমসাধনা করিয়াছেন,—কোমলতার ভিতর দিয়া যে সুকঠিন অদর্শ লাভ করিয়াছেন, —কুসুমাকীর্ণ পথে প্রবেশ করিয়া যে দুর্গম পন্থার অভিশাপকে স্বেচ্ছায় বরণ করিয়া লইয়াছেন, তাহার নিদর্শন এই গীতিকাগুলির পত্রে পত্রে পাইবেন। এই পল্লীগাথায় সেই সাধনপথের পথিক-রমণীদের পদচিহ্ন পড়িয়া আছে, সেই পাদপীঠের উপর বিশ্বের শির লুটাইয়া পড়িলেও তাহা অযোগ্য হইবে না।

 এই পল্লীগানগুলিতে যে সুর বাজিয়া উঠিয়াছে, তাহার আধ্যাত্মিকতা বৈষ্ণব-গীতিতে আরও মহান্ হইয়াছে। দেশব্যাপী এই প্রেমসাধনার দরুণ বঙ্গভাষা যেরূপ কোমল ও সুশ্রাব্য হইয়াছে, তাহা বিশেষরূপে প্রণিধানযোগ্য। বঙ্গভাষার সুকুমার শব্দ-সম্পদ্ অতুলনীয়। যাঁহারা বৈষ্ণবপদাবলী ইংরেজীতে অনুবাদ করিবার চেষ্টা পাইবেন, তাঁহারা পদে পদে অসুবিধা ভোগ করিবেন। ধরুন বাঙ্গালা একটা শব্দ “মান”—ইহা সংস্কৃত নহে। ইহারা জোড়া ইংজৌতে মিলিবে না, “মান” ও “মানিনী” শব্দের ইংরেজী প্রতিশব্দ ভাবিয়া পাওয়া যায় না। বাঙ্গালা “সোহাগ” কথায় যে কত মধুরতা নিহিত আছে, তাহা ভাষান্তরে ব্যক্ত হইবার নহে। ইহা ছাড়া “লাবনী”, “রঙ্গিনা”. “ডগমগ” প্রভৃতি কথা বাঙ্গালা অভিধানের বৈশিষ্ট্য দেখাইবে। আর একটা খাটি বাঙ্গালা কথা “ভাবিনী” (যথা “ভাবিনী ভাবের দেহা”—চণ্ডীদাস); এই শব্দের অর্থ চিন্ময়ী। বাঙ্গালা “এলায়ে” কথাটায় সে বশ আছে তাহা ভাষান্তর করিয়া বুঝান শক্ত (যথা “পরশ লাগি এলায়েছে গা”— জ্ঞানদাস)। “শীতল চরণ” —এই গ্রীষ্মপ্রধান দেশের পরম মধুর স্নিগ্ধতা ব্যঞ্জনা করিতেছে; শীতের দেশের ভাষায় অর্থ উল্টা হইয়া যায়। “শীতল তছু অঙ্গ পরশ রস লালসে” (জ্ঞান দাস) এবং “কই কই প্রেমময়ি—পরশিয়া অঙ্গ শীতল হই” (কৃষ্ণ-কমল)—এই পদগুলির “শীতল” শব্দের মধুরতা ইংরেজীতে কিরূপে বুঝাইতে পারা যাইবে? “রাঙ্গা চরণ”, আল্‌তা অথবা পদ্মের বর্ণের কথা মনে করাইয়া দেয়; তাহা বিদেশীয় ভাষায় বুঝান যায় না। ইহা ছাড়া “জপ”, “তপ”, “আরতি” প্রভৃতি কথা দেবমণ্ডপে পূজারীর শ্রদ্ধার ভাব জ্ঞাপন করিতেছে। বিদেশী ভাষায় তাহার জোড়া মিলিবে না। খাটি বাঙ্গালা ‘নিছুনি’ কথার তুলনা নাই; এমন কি বাঙ্গালায় ষড়ঋতুর পরিচিত আনন্দদায়ক মূর্ত্তিস্মারক “বাদর”, “শাঙন্” প্রভৃতি কথার সঙ্গে এদেশের বিরহ-মথিত যে করুণ স্মৃতি জড়িত, তাহা শুধু প্রতিশব্দ দিয়া বুঝান যায় না।

 খাটি বাঙ্গালায় “যমকের” যে বহর আছে, পৃথিবীর অন্য কোন ভাষায় তাহার তুলনা আছে কিনা জানি না। কত শব্দ ও শব্দাংশের দ্বারা যে খাটি বাঙ্গালার অভিধান পুষ্ট হইয়াছে, তাহা এখন পর্য্যন্ত বঙ্গের অভিধানকারদিগের নজরেই পড়ে নাই। বলা বাহুল্য যে সুকোমল ভাবব্যঞ্জনাতেই এই সকল শব্দের সূক্ষ্ম ও বিচিত্র অর্থ বঙ্গের ঘরে ঘরে পুষ্ট হইয়াছে। এক “ভাল” শব্দটির কত অর্থ হইতে পারে, তাহা এই ছত্রটিকে দেখুন:—“ভাল ভাল বঁধু ভাল ত আছিলে। ভাল সময় এসে ভালই দেখা দিলে।” প্রথম “ভাল ভাল” দুইটি শব্দের অর্থ—বেশ্ বেশ্, তৃতীয় “ভাল”টি স্বাস্থ্যজ্ঞাপক, চতুর্থ “ভাল”টির অর্থ “ঠিক” এবং পঞ্চম “ভাল”র অর্থ “উচিত কাজ”। সামান্য বানানের তফাৎ কিন্তু উচ্চারণ এক রকম, অথচ অর্থ সম্পূর্ণরূপে পৃথক, এরূপ শত শত শব্দ বাঙ্গালার ঘাটে পথে পাওয়া যায়:—যথা “শয়ন করিয়া সে কুসুম শেজে, হৃদয়ের মাঝে রাখি মোরে সে যে”। প্রথম “শেজ” অর্থ শয্যা; দ্বিতীয় “সে” আর “যে” দুইটি পৃথক শব্দ হইলেও উচ্চারণের সাদৃশ্যের দরুণ একই শব্দের মত মনে হয়। এরূপ আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যাইতে পারে, “শোন গো নীরবে, বাঁশী বাজে ঐ কি রবে, বলদেখি ও রবে, কে ঘরে রবে।” প্রথম “রব” অর্থ “শব্দ”; শেষের “রবে”, “রহিবে”র রূপান্তর।” “চল্ গো যে যাবে, শশি-মুখে বাঁশী কতই বাজাবে”। “বাজাবে”র ‘জাবে’ ও “যাবে” দুইটি ভিন্ন শব্দ, কিন্তু উচ্চারণ একরূপ। “কানু কহে রাই, কহিতে ডরাই, ধবলী চরাই বনে”—এই ছত্রটিতে “রাই” শব্দ কত বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হইয়াছে। “যদি না পাই কিশোরীরে, কাজ কি শরীরে।” এখানে “কিশোরীরে” ও “কি শরীরে” কেমন মিলিয়া গিয়াছে; অথচ দুইটি সম্পূর্ণ পৃথক শব্দ। “আমি যে রাধার লাগি হ’লাম বনবাসী, ধরাচূড়া বাঁশী কতই ভাল বাসি”— এখানে “বনবাসী”র “বাসী”, “বাঁশী” এবং “ভালবাসি”র “বাসি” ধ্বনিতে প্রায় একরূপ হইয়াও ভিন্ন ভিন্ন অর্থ সূচক। “হেথা থাক্‌তে বদি মনে না থাকে, তবে যেও সেথাকে” এবং “যথা যে না থাকে, তারে আর কোথা কে, ধ’রে বেঁধে কেবা রেখে থাকে” এখানে প্রথম ও দ্বিতীয় পদের দুইটি “থাকে” পদের প্রতি লক্ষ্য করুন। এক শব্দ বাঙ্গালায় কতই না খুটি নাটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হইতেছে। “নেত্র পলকে যে নিন্দে বিধাতাকে, এত ব্যাজে দেখা সাধে কি গো তাকে” এবং “যেন সুধাকরে সুধা বরিষন করে”—এই দুটি ছত্রের মধ্যে ও “তাকে” এবং “করে” শব্দ দুইটির প্রতি লক্ষ্য করুন। “যতই কাঁদে বাছা বলি সর সর, আমি অভাগিনী বলি সর্ সর্, বল্‌লাম নাহি অবসর, কেবা দিবে সর” পদে প্রথম “সর” অর্থ নবনীত, দ্বিতীয় “সর্” অর্থ “দূর হ’” তৃতীয় “সর” “অবসরে”র। “শুন হে কেশব বল্‌বে লোকে সব”—এখানে “কেশব” ও লোকেসবে’র “কেসব”দুইটি শব্দের ধ্বনি-সাম্য লক্ষ্যণীয় “আমার মরণ সময়ে কি কাজ ভূষণে, এভূষণ নাহি যাবে কভু সনে” এখানে “ভূষণ” ও কভু সনের“ভুসন” দ্রষ্টব্য।

 আমি একটা খাতায় এরূপ শত শত শব্দ টুকিয়া রাখিয়াছিলাম। এই শব্দ কলায় যে সূক্ষ্ম‌ বাক্‌শিল্প প্রদর্শিত হইয়াছে, তাহার বিন্যাস ঢাকার মস্‌লিন্ কিংবা তারের কাজের বুনুনীর মত। এই যে শত শত শব্দের অতি নিপুণ কারুকার্য্যে আমাদের ভাষা অলঙ্কৃত হইয়াছে, তাহা কাহারও নজরে পড়ে নাই। প্রাজ্ঞমানী সমালোচক গোবিন্দ অধিকারী ও কৃষ্ণকমলের পদে এই যমকালঙ্কারের বাহুল্য দেখিয়া নাসাকুঞ্চন করিয়াছেন। হয়ত, কতকটা বাড়াবাড়ি তাঁহাদের ছিল। কিন্তু জাতীয় ভাষার মহৈশ্বর্য্যের সন্ধান যাঁহারা পাইয়াছিলেন, তাঁহারা যদি পরম গর্ব্বের সহিত একটু বেশী দ্রুত ছুটিয়া চলিয়া থাকেন, তজ্জন্য তাঁহারা নিন্দনীয় নহেন—তাঁহাদের কাছে, যাঁহারা বাঙ্গালাভাষার এই মহা-শক্তির সন্ধানটা একেবারেই রাখেন না। বাঙ্গালা ভাষারূপ পদ্মের এই শত সুকোমল পাপড়ী বাঙ্গালীর প্রেমসরোবরে জন্মিয়াছিল। বাঙ্গলা ভাষায় এই অসামান্য সম্পদ দাশরথী যতট। আবিষ্কার করিয়াছেন—অপর কেহ বোধ হয়, ততদূর পারেন নাই। পূর্ব্বে যে সকল শব্দের উল্লেখ করিয়াছি তাহা খাঁটি বাঙ্গালা শব্দ। কিন্তু সংস্কৃত শব্দের যোগে বাঙ্গালা ভাষায় যেরূপ সুমধুর যমকের সৃষ্টি হইতে পারে, জয়দেবের সংস্কৃতেও তেমন যমকের মাধুর্য্য কদাচিৎ দৃষ্ট হয়। দুই একটি দৃষ্টান্ত দিতেছি। “সখী ধর আভরণে দিও রাই চরণে, যেন মরণে কিশোরী কৃপা করে মোরে” এখানে তিনটি “রণে” দ্রষ্টব্য। “আমার মত তোমার শতেক রমণী, তোমার মত আমার তুমি গুণমণি, যেমন দিনমণির কত কমলিনী—কমলিনীগণের ঐ একই দিনমণি।” এখানে তিন রকমের “মণি” পাওয়া যাইতেছে। “আমি নহি প্রেমযোগ্য, করেছিলাম প্রেম যজ্ঞ”—আর একটি উদাহরণ। “দাসীর এই নিবেদন, মনের বেদন”—পদে “বেদন” দুই বার পাওয়া যাইতেছে, অর্থ সম্পূর্ণ ভিন্ন। বাঙ্গালা ভাষায় সর্ব্বত্র এইরূপ সূক্ষ্ম কথার বুনুনী। এই ভাষা যাঁহারা তন্ন তন্ন করিয়া বিচার করিবেন, তাঁহারা ইহার অসাধারণ শক্তি হৃদয়ঙ্গম করিতে পারিবেন। সারেঙ্গ্ বাজাইয়া যখন বৈষ্ণব-ভিখারী গায়:—“আহা মরি, সহচরী, হায় কি করি, কেন এ কিশোরীর সুশর্ব্বরী প্রভাত হৈল” তখন সারেঙ্গের “ঋ” “ঋ”, গানের “রি” “রি” র সঙ্গে এমন বেমালুম মিশিয়া যায়, যেন কণ্ঠ ও যন্ত্র সমস্বরে একমন্ত্রে বাজিয়া উঠে। ইহা ভাষার অপূর্ব্ব ঐশ্বর্য্যের দ্যোতনা করিতেছে।

 এই পল্লীগীতিকাগুলি পড়িলে দেখা যাইবে, বৈষ্ণব কবিতার প্রভাব ইহাতে এক ফোঁটাও নাই। গীতিকাগুলির ভাষা অমার্জ্জিত, বৈষ্ণব কবির ভাষা মার্জ্জিত। গীতিকাগুলির প্রেমকথার মধ্যে মধ্যে একটা উচ্চরাজ্যের আভাস ইঙ্গিত আছে সত্য, কিন্তু তাহার। আধ্যাত্মিকতার ধার একেবারেই ধারে না। এগুলি গ্রাম্য প্রেমিক-প্রেমিকার কথায় পূর্ণ,—রাধাকৃষ্ণের লীলার কথা স্মরণ করাইবার মত তাহাদের মধ্যে কিছুই নাই। কোন কোনও গীতি চণ্ডীদাসেরও পূর্ব্বে বিরচিত হইয়া থাকিবে, কিন্তু অধিকাংশই পরবর্ত্তী কালের। এই পালাগান রচকেরা বৈষ্ণব কবিদের কোনও সন্ধানই রাখিতেন না। তাঁহারা নায়ক নায়িকার প্রেমে মশ্‌গুল হইয়া পালা রচনা করিয়াছেন। বৈষ্ণব ধর্ম্মের ধার তাঁহারা ধারেন না। তথাপি বড়ই আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, চণ্ডীদাসের রচনার সঙ্গে অনেক সময় ছত্রে ছত্রে ইঁহাদের অতীব বিস্ময়কর মিল দৃষ্ট হয়। আমরা তাহার কয়েকটা দৃষ্টান্ত দিতেছি। “ধোপার পাটে” এই ছত্রটি পাওয়া যায়—“জিহ্বার সঙ্গেতে দাঁতের পীরিতি, আর ছলাতে কাটে” (১২।৩০)। চণ্ডীদাসের “জিহ্বার সঙ্গেতে দাঁতের পীরিতি সময় পাইলে কাটে।” “ধোপার পাটে” “তোমার চরণে আমার শতেক পরণাম” (২৪ অঃ)—পদটি চণ্ডীদাসের এই সুন্দর গানটি মনে করাইয়া দিবে— “তোমার চরণে বঁধু শতেক পরণাম। তোমার চরণে বঁধু লিখো আমার নাম॥ লিখিতে দাসীর নাম লাগে যদি পায়। মাটিতে লিখিয়া নাম চরণ দিও তায়॥” চণ্ডীদাসের সুবিখ্যাত “সুখের লাগিয়া, এঘর বাঁধিনু, অনলে পুড়িয়া গেল। অমিয়াসাগরে, সিনান করিতে সকলি গরল ভেল”।—পদটির সঙ্গে “ভেলুয়ার” নিম্নলিখিত ছত্রগুলি পড়ুন। এখানে ভাষা ও উপমার অবিকল ঐক্য নাই, কিন্তু ভাব একরূপ। “গাছের তলায় আইলাম ছায়া পাইবার আশে। পত্র ছেইদ্যা রৌদ্র লাগে আপন কর্ম্ম দোষে॥ ঘরেতে পাতিলাম শয্যা নিদ্রার কারণ, সেই ঘরে লাগিল আগুন কপালে লিখন” (৯।৬৩-৬৬)। “বেড়ায় খাইল ক্ষেত আপন কর্ম্মদোষে” (ভেলুয়া ৯।৬)। “ধোপার পাটের” (২।৯-১৬) পদটি পড়ুন,—রাজকুমার ঝঞ্ঝাবৃষ্টি সহ্য করিয়া রজক-কুমারীর জন্য তাহার গৃহের আঙ্গিনায় অপেক্ষা করিতেছেন; অথচ সে তাঁহাকে ইঙ্গিত করিয়া ডাকিয়া আনিয়া জাগ্রত পিতামাতার চক্ষু এড়াইয়া বাহিরে যাইতে পারিতেছে না। পল্লীগীতিকার এই আলেখ্যটির উৎকৃষ্ট টিপ্পনী করিয়াছেন চণ্ডীদাস:—“এ ঘোর রজনী, মেঘের ঘটা, কেমনে আইলা বাটে। আঙ্গিনার মাঝে, বঁধুয়া ভিজিছে, দেখে যে পরাণ ফাটে॥ ঘরে গুরুজন, ননদী দারুণ, বিলম্বে বাহির হনু। আহা মরি মরি, সঙ্কেত করিয়া, কত না যাতনা দিনু॥” “ধোপার পাটের”—“কাট্যা গেছে কাল মেঘ চাঁদের উদয়। এই পথে যাইতে গেলে কুলমানের ভয়॥” (২।১৮) পড়িলে চণ্ডীদাসের “কহিও বঁধুরে সখি কহিও বঁধুরে। গমন বিরোধী হৈল পাপ শশধরে” কবিতাটি স্বতঃই মনে পড়িবে। মহিষালবন্ধু যেখানে তাঁহার মর্ম্মান্তিক বিরহের সুরটি বাঁশীতে ধ্বনিত করিয়া কাতর ভাবে দুঃখ নিবেদন করিতেছেন, সেই সুর সাজুতী কন্যার বুকে শেলের মত বিঁধিতেছে। তাহার মহিষাল বঁধু বুঝি তাঁহার জন্য আকুলি বিকুলি করিয়া মরিতে বসিয়াছে, এই ভাবনায় তিনি গৃহে ছট্‌ফট্ করিতেছেন। এই প্রাণমাতান বাঁশীর সুরে নায়িকার হৃদয় তন্ত্রী বাজিয়া উঠিতেছে। বাঁশীসম্বন্ধীয় এই প্রসঙ্গে চণ্ডীদাসের অসংখ্য গীতি মনে পড়িবে। “সরল বাঁশের বাঁশী নামের বেড়া জাল। সবার অমিয়া বাঁশী, রাধার হৈল কাল॥”—“খলসংহতি সরলা, তা কি জাননা বাঁশী, আমি একে নারী তায় অবলা,” হইতে আরম্ভ করিয়া “কৃষ্ণকীর্ত্তনের” সেই অতুলনীয় “কেনা বাঁশী বাএ বড়ায়ি যমুনা নঈকূলে” প্রভৃতি কবিতাগুলি যে মধুর রসে পুষ্ট, তাহার আদি খরবটা যেন এই পল্লীগাথায় পাওয়া যাইতেছে।

 চণ্ডীদাস সংস্কৃতে মহাপণ্ডিত হইলেও তিনি পুথিগত বিদ্যা সরাইয়া রাখিয়া ঘরের কথায় প্রাণের গীত গাহিয়াছেন। পালাগানগুলিও সেই ঘরের কথায় রচিত হইয়াছে। তাহাদের মধ্যেও বই-পড়াবিদ্যার এতটুকু চাকচিক্য নাই।

 শুধু চণ্ডীদাসের পদে নহে, পালাগানের অনেক পদের সঙ্গে আপরাপর বৈষ্ণব কবিদের গীতিকার বিশেষরূপ ঐকা দৃষ্ট হয়। জ্ঞানদাসের অতুলনীয় “ঢল ঢল কাঁচা অঙ্গের লাবণী অবনী বহিয়া যায়” পদটির স্মারক বহু ছত্র প্রাচীন পালাগানে পাওয়া গিয়াছে, যথা:—“অঙ্গের লাবণী সোনাইর বাইয়া পড়ে ভূমে” (দেওয়ান ভাবনা, ২।১২)—“হাঁটিতে মাটিতে ভাসে অঙ্গের লাবণী” (ইশা খাঁ), “হাঁটিতে ভাঙ্গিয়া পড়ে অঙ্গের লাবণী” (ভেলুয়া) ধোপার পাটের “কাল দিন চল্যা গেল কা’ল হৈল কাল” (৯।৪২) ছত্রটি বিদ্যাপতির “কাল অবধি পিয়া গেল......ভেল পরভাত পুছই সবহুঁ। কহ কহ রে সখি কালি কবহুঁ” পদের প্রতিধ্বনির ন্যায়। লোচন দাসের “এস এস বঁধু এস, আধ আচরে ব’স” গানটির একটি ছত্র “ফুল নও যে কেশের করি বেশ।” পালাগানগুলিতে বাংরবার এই ভাবটি পাওয়া যায়, যথা:—“ফুল যদি হইতারে বঁধু ফুল হৈতা তুমি। কেশেতে ছাপাইয়া রাখতাম ঝাইরা বাইনতাম বেণী।” (মহুয়া, ৮।২২), “পুষ্প হইলে বঁধু খোপায় বাইনতাম তোরে” (দেওয়ান ভাবনা, ৪।২৬), এবং “পুষ্প হৈলে বঁধুয়ারে গাইথ্যা রাখতাম তোরে” (কমলা)। ঊনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে গোপাল উড়ে “গোবরা পোকা হৈয়া বসিলি পদ্মে” পদের দ্বারা শ্রোতৃবর্গেকে তাক্ লাগাইয়া দিয়াছিলেন। চতুর্দ্দশ শতাব্দীতে বিরচিত “ধোপার পাটে” আমরা এই ছত্রটি পাইতেছি “ভ্রমরা আছিলা তুমি হৈলা গোবরিয়া (৪।১৭)। আমরা “ধোপার পাটে”র ভূমিকায় পালা গানের সঙ্গে বৈষ্ণব কবিগনের রচনার এইরূপ আশ্চর্য্য ঐক্য সম্বন্ধে সংক্ষেপে যাহা লিখিয়াছিলাম তাহা এখানে কতকটা বিস্তৃত করিয়া লিখিলাম। আমরা দান-লীলার একটি পদে পাইয়াছি “আমার মত সুন্দর নারী কানাই যদি চাও। গলায় কলসী বান্ধি যমুনায় ঝাঁপ দাও॥ কলসী কোথায় পাব রাধে কোথায় পাব দড়ি। তোমার গলার হার দাও আর খোপা বান্ধা দড়ি।” এই ছত্রগুলির সঙ্গে মহুয়ার “লজ্জা নাই নিলাজ ঠাকুর লজ্জা নাইরে তর। গলায় কলসী বাঁধি জলে ডুবে মর। কোথায় পাব কলসী কন্যা কোথায় পাব দড়ি। তুমি হও গহিন গঙ্গা আমি ডুবে মরি।” (মহুয়া, ১০ পৃঃ) প্রভৃতি পদের বিশেষ ঐক্য দৃষ্ট হয়।

 পূর্ব্বে লিখিয়াছি বৈষ্ণব কবিগণের নিকট হইতে পল্লীকবিরা এই সমস্ত ভাব পান নাই। বৈষ্ণব কবিরা ও সম্ভবতঃ এই গ্রাম্য গীতিকা হইতে ঋণ গ্রহণ করেন নাই। পরস্পরের মধ্যে আদান-প্রদানের সম্বন্ধ না থাকিলে এই আশ্চর্য্য ঐক্য কি প্রকারে ঘটিল, এ প্রশ্নের সামাধান কিরূপে হইবে? আমাদের বিশ্বাস বাঙ্গালার গৃহ-প্রাঙ্গনে, দাম্পত্য-বাসরে, মেয়েলী ছড়ায়—প্রমোদ-বীথিকায় যে সকলা কথার হরিলুট হইতেছিল, পল্লীগায়ক ও বৈষ্ণবকবি ইহারা উভয়েই সেই বাঙ্গালীর প্রাণের মূলধন হইতে কথা সংগ্রহ করিয়াছিলেন। এই সকল কথা বাঙ্গালাদেশের হাওয়ায় পাওয়া, মুখে মুখে শোনা, ঘরের দাওয়ায় কুন্দ ফুলের মত অজস্র-বিলানো, ইহা কে কাহার নিকট হইতে পাইয়াছেন, তাহা বলা যায় না। বঙ্গের বধূরা কি ভাবে তাঁহাদের জীবন যাত্রার পথটি অজ্ঞাতসারে এইরূপ কথা-কুসুমাকীর্ণ করিয়াছিলেন, তাহা জানা যায় না। কিন্তু শত শত খ্যাত-নামা কবি যে এই সকল কথা-রত্ন বাড়ীতে বসিয়া কুড়াইয়া পাইয়াছিলেন, তাহাতে আমাদের সন্দেহ নাই।

 শুধু বৈষ্ণব পদে নহে, বঙ্গের প্রাচীন কবিগণের প্রায় সকলেই এই কথা-ভাণ্ডার হইতে ভাব ও ভাষা চয়ন করিয়াছিলেন। পল্লীগীতিগুলি ভালরূপ সন্ধান করিলে তাহা টের পাওয়া যাইবে। এখানে কয়েকটি উদাহরণ দিতেছি। মইষাল বঁধুর একটি পদ এইরূপ “ভরা কলসীর জল জমিনে ফেলিয়া। জলের ঘাটে যায় কন্যা কলসী লইয়া” (১১।১২)—ডাকের বচনে অতি সংক্ষেপে এই কথাটি বলা হইয়াছে—“পানি ফেলি পানিকে যায়।” (বঙ্গসাহিত্য পরিচয় ১মভাগ ৮ পৃঃ) কঙ্ক ও লীলার “তুমি হও তরুরে বঁধু আমি হই লতা। বেইড়া রাখব যুগল চরণ ছাইড়া যাবে কোথা।” (প্রথম খণ্ড ২৫০ পৃঃ) পদটি ময়নামতির গানে অদুনার উক্তির অবিকল একরূপ—“তুমি হবু বট বৃক্ষ আমি তোমার লতা। রাঙ্গা চরণ বেড়িয়া রমু ছাড়িয়া যাইবা কোথা।” কঙ্ক লীলার “মুষ্টিতে ধরিতে পারি কটি খানি সরু” (৩।৭) কৃত্তিবাসের “মুষ্টিতে ধরিতে পারি সীতার কাঁকালি” র অনুরূপ। ভেলুয়ার—“মনে বিষ মুখে মধু এতেক কহিয়া। ভেলুয়ার নিকটে গেল বিদায় মাগিয়া॥” (২য় খণ্ড ৫০ পৃঃ) পদটি কবিকঙ্কণের “মনে বিষ মুখে মধু জিজ্ঞাসে ফুল্লরা। ক্ষুধাতৃষ্ণা দূরে গেল রন্ধনের ত্বরা।” পদটি স্মরণ করাইয়া দিবে।

 অনুসন্ধিৎসু চক্ষে পাঠ করিলে পাঠক এই পল্লীগীতিকাগুলিতে আমাদের ভাষালক্ষ্মীর অবগুণ্ঠন মোচন করিয়া তাঁহার স্বরূপটি দেখিতে পাইবেন। এই গীতিকা বঙ্গসাহিত্যের মণিময় আকর স্বরূপ। পল্লীতেই এদেশের প্রাণের কথা, মর্ম্মোচ্ছ্বাস, স্বভাব-সুলভ সরল কবিত্ব—বনজ পুষ্পের ন্যায় প্রথম ফুটিয়াছিল। মালীরা তাহাই লইয়া কৌশলে হার গাঁথিয়াছেন। উত্তর কালে যাত্রা, কথকতা, কবিগান, কীর্ত্তন ও মঙ্গলগান উৎসবনিশীথে যে আনন্দধারা বিলাইয়াছে—তাহার মূল—নির্ঝর—তাহার হরিদ্বার,—এই গীতিকা সমূহ।

 এই পালা গানের একধারা ধোপার পাট, কাঞ্চনমালা ও চন্দ্রার ন্যায় উপাখ্যানে স্বর্গীয় মন্দাকিনীর অনাবিল পবিত্রতা প্রকট করিতেছে; অপর একধারা ময়নামতীর গান, নিজাম ডাকাইতের পালা, প্রভৃতি আখ্যানে অপ্রাকৃত এবং দুর্ভেদ্য প্রহেলিকার সৃষ্টি করিয়া ভোগবতীর ন্যায় কোন নিগূঢ় তান্ত্রিক রাজ্যের দিকে ছুটিয়াছে; তৃতীয় ধারা—মাণিকতারার কাহিনীতে ফলপুষ্পশোভিত, হর্ষ-দ্বন্দ্ব-সুখ-ক্ষোভ-সম্মিলিত এই পার্থিব রাজ্যের মধ্য দিয়া গঙ্গাধারার ন্যায় সাধু-অসাধু, পুণ্য ও পাপ—এই দুই কূল প্রতিবিম্বিত করিয়া দেখাইতেছে— কখনও বা তাহা দুকূল ভাঙ্গিয়া প্রাচীন ঐতিহাসিক কীর্ত্তির কঙ্কাল প্রকাশ করিয়া দেখাইতেহে।

 এক সময়ে—হয়ত বা হিন্দুরাজার আমলে—যখন পূর্ব্ববঙ্গে শূরবংশের রাজধানী ছিল—তখনকার দিনে রাজপ্রাসাদ হইতে মাল্যচন্দন পাইয়া যশের তিলক মণ্ডিত ললাটে গায়েনেরা সমস্ত বঙ্গদেশে এই ভাবের গান ও রূপকথার ফিরি দিয়া হাটে পথে তাহাদের কোমলকান্ত পদাবলী ছড়াইয়ছিল, এই জন্য পূর্ব্ববঙ্গের সীমান্তে, উত্তরবঙ্গে ও পশ্চিম বঙ্গে কাব্য কথার মধ্যে এইরূপ আশ্চর্য্য ঐক্য পাওয়া হাইতেছে


পালাগানোক্ত অর্ণব যান ও চিত্রের কথা।

 এই খণ্ডে যে সকল নর-নারীর শুধু কালীর রেখায় আঁকা ছবি দেওয়া গেল, তাহা শ্রীযুক্ত বিশ্বপতি চৌধুরী এম, এ—অঙ্কিত। তিনি চক্ষুরোগে ভুগিতেছিলেন, তথাপি আমার কার্য্য অশেষ অনুরাগ দেখাইবার আগ্রহে অতি অল্প সময়ের মধ্যে আটখানি ছবি আঁকিয়াছেন, এজন্য বোধ হয় তাঁহার চক্ষু রোগ বাড়িয়া গিয়াছে। আমি তজ্জন্য কতকটা লজ্জিত ও মর্ম্মাহত হইয়া তাঁহার প্রতি আমার স্নেহ ও কৃতজ্ঞতা জানাইতেছি, যেহেতু তিনি সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থ ভাবে এই শ্রম স্বীকার করিয়াছেন। শুধু কালীর রেখাপাতে আঁকা হইলেও ছবিগুলিতে শিল্পী যে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন, আশাকরি তজ্জন্য তিনি প্রশংসা অর্জ্জন করিবেন।

 শ্রীযুক্ত আশুতোষ চৌধুরী আমাদের অন্যতম পালাগান সংগ্রাহক। ভেলুয়া, কাঞ্চন মালা, মহুয়া, মইষালবন্ধু প্রভৃতি কাব্যে যে সকল ডিঙ্গিনৌকা ও জাহাজের বিবরণ পাওয়া যায়, তাহাদের অধিকাংশই চট্টগ্রামের বালামী নামক এক শ্রেণীয় হিন্দুদের দ্বারা প্রস্তুত হইত। ইহারা এখনও জাহাজ প্রস্তুত করিয়া থাকে। প্রচীন বঙ্গসাহিত্যে নৌকা ও জাহাজের বহুল বিবরণ আছে, সুতরাং বালামীদের হাতের কাজের কতকটা নমুনা দেওয়ায় পালাগানাগুলি আরও চিত্তাকর্ষক হইবে, এই ধারনায় আমি আশুবাবুকে চট্টগ্রামে নির্ম্মিত প্রাচীন ও আধুনিক জাহাজের ফটোগ্রাফ পাঠাইবার জন্য অনুরোধ করিয়া চিঠি লিখিয়াছিলাম। তিনি এজন্য প্রাণান্ত পরিশ্রম করিয়া আমাকে অনেকগুলি ফটোগ্রাফ পাঠাইয়াছেন—তন্মধ্যে বিগত মহাযুদ্ধের সময় বালামীরা যে সকল সুলুপ তৈরী করিয়াছিল, তাহাদেরও কয়েকটি নমুনা আমরা পাইয়াছি। আশুবাবু এই ফটোগ্রাফ সংগ্রহের চেষ্টায় একবার ঝড়ে নৌকাডুবি হইয়া মরিবার পথে দাঁড়াইয়াছিলেন।

 বালমীরা কর্ণফুলী নদীর তীরবাসী যোগী জাতীয়। সম্ভবতঃ সমুদ্রযাত্রার নিষেধ না মানিয়া তাহার। জাহাজ-নির্ম্মান করে, কিম্বা এক সময়ে তাহারা নাথ-সম্প্রদায়-ভুক্ত ছিল, এজন্য তাহারা “বাহিরিয়া” বলিয়া উক্ত হইয়া —এই শব্দের অর্থ বোধ হয়—‘সমাজ বহির্ভূত’ অর্থাৎ ইহাদের জল আচরণীয় নহে।

 প্রাচীন বঙ্গসাহিতো—বিশেষ করিয়া এই পল্লী-গাথা-সাহিত্যে আমরা সমুদ্র-যাত্রা ও নানা প্রকার ডিঙ্গি নির্ম্মাণের বহুল উল্লেখ পাইতেছি। ১৫৭৫ খৃঃ বংশীদাস তাঁহার মনসার ভাসানে জাহাজ নির্ম্মানের বিশদ বিবরণ দিয়াছেন। বংশীদাস ময়মনসিংহ বাসী ছিলেন। ব্রহ্মপুত্র, কংস, ধনু, ভৈরব—প্রভৃতি নদের উদ্দণ্ড লীলায় লীলায়িত এই দেশের সঙ্গে বহির্জগতের জলপথে যে বিস্তৃত বানিজ্যের কারবার ছিল, তাহার নিদর্শন এই সকল পালা-গানের পত্রে পত্রে পাওয়া যায়।

 যে সমস্ত জাহাজের উল্লেখ এই গাথা-সাহিত্যে পাওয়া যায়—তাহাদের অধিকাংশই যে চট্টগ্রামের বন্দরে, হালিসহর, পতেঙ্গা, ডবলমবিং প্রভৃতি কর্ণফুলী-নদীর তীরস্থ পোতাশ্রয়ে নির্ম্মিত হইত, তাহাতে সন্দেহ নাই। খৃষ্টীয় তৃতীয় ও চতুর্থ শতাব্দীতে চট্টগ্রামের জাহাজ বালী, যাবা, সুমাত্রা, কোচিন, ও আরব-সাগরে বানিজ্যার্থে যাইত। কলিঙ্গ দেশের লোকের সহযোগে যে সকল বাঙ্গালী শিল্পী যাবার ‘বরোবদর’ মন্দির ও বালীর প্রম্ববনম্ নামক স্থানে নানারূপ হিন্দু দেবদেবীর মূর্ত্তি নির্ম্মাণ করিয়াছিলেন, চট্টগ্রামের অর্ণব-যানই তাহাদের যাতায়াতের পথ প্রশস্ত করিয়াছিল। এমন এক দিন ছিল, যখন তুরস্কের সুলতান আলেকজেন্দ্রিয়া-বন্দরের জাহাজ-নির্ম্মান-পদ্ধতি মনোনীত না করিয়া তদীয় অর্ণবপোত-নির্ম্মানের জন্য চট্টগ্রামের বালামীদিগকে নিযুক্ত করিতেন। মহিন্দ নামক চৈনিক পর্য্যটকের প্রদত্ত বিবরণ হইতে আমরা ইহা জানিতে পারিয়াছি। দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ্নে ইদ্রিস নামক সুবিখ্যাত লেখক চট্টগ্রামকে “কর্ণবুল” বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। এই “কর্ণ-বুল” যে কর্ণ-ফুলী নামের অপভ্রংশ, তাহাতে সন্দেহ নাই। চট্টগ্রামের সঙ্গে আরবদেশের বানিজ্য-সম্পর্কের উল্লেখ করিয়া পর্ত্তুগিজ লেখক ডি, বরোস অনেক কথা লিখিয়াছেন। আরব হইতে চট্টগ্রাম-নির্ম্মিত অর্ণবযানে আরোহন করিয়া বহু পীর, আউলিয়া ও দরবেশ সে দেশে আসিয়াছিলেন, তাহায় প্রমাণ আছে। ১৪০৫ খৃঃ অব্দে চেংহো নামক মন্ত্রীকে চীন-সম্রাট্ চট্টগ্রামের সঙ্গে বানিজ্য ঘটিত কলহের মীমাংসার জন্য তদ্দেশে পাঠাইয়াছিলেন। ১৪৪৩ খৃঃ অব্দে ইবন বটুটা চট্টগ্রামের অর্ণবযানে যাবা এবং চীন প্রভৃতি স্থানে পর্য্যটন করিয়াছিলেন এবং ১৫৫৩ খৃঃ অব্দে গোয়ার পর্ত্তুগীজ শাসন-কর্ত্তা নমু-ডি-চোনা তদীয় সেনাপতি ডি, মান্নাকে দুইশত সৈন্য এবং পাঁচখানি জাহাজ সহ চট্টগ্রামে কয়েকটি বাণিজ্য কেন্দ্র স্থাপন করিবার জন্য প্রেরণ করিয়াছিলেন। অতি প্রাচীন কাল হইতে চট্টগ্রামের অর্ণব-পোতের গৌরবের নানা প্রমাণ ও নিদর্শন পাওয়া যায়। চাঁদ সদাগরের কীর্ত্তিকথা চট্টগ্রামে সমধিক পরিমাণে প্রচারিত। সম্প্রতি (১৮৭৫ খৃঃ অব্দের পর হইতে) ইউরোপীয় বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে প্রস্তুত জাহাজের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অসমর্থ হইয়া চট্টগ্রামের সেই গৌরব ক্ষুণ্ণ হইয়াছে।

 মুসলমান-শাসনের শেষ অধ্যায়েও চট্টগ্রামের অনেক বিখ্যাত বানিজ্যব্যবসায়ী জাহাজ-অধিকারীদের নাম পাওয়া যায়। রঙ্গ্যা বছির, গুমানী মালুম, মদন কেরাণী ও দাতারাম চৌধুরী প্রভৃতি বিখ্যাত পণ্যব্যবসায়ীর মধ্যে কাহারও কাহারও শতাধিক অর্ণবপোত ছিল। পঞ্চদশ শতাব্দীতে যখন পর্ত্তুগিজ জলদস্যুরা (হার্ম্মাদগণ) বঙ্গোপসাগরে উপদ্রব করিত—চট্টগ্রামের বণিকদিগের জাহাজ লুটপাট করিয়া তাহাদিগের প্রাণ নাশ করিত, তখন বণিকেরা দলবদ্ধ হইয়া বহু ‘সুলুপ’ লইয়া শত্রুদের বিরুদ্ধে দাঁড়াইতেন; এই পোতসঙ্ঘকে “সুলুপ-বহর” নামে অভিহিত করা হইত; এখনও চট্টগ্রামের নিকট ‘সুলুপ বহর’ নামক একটি স্থান আছে। এই আত্মরক্ষণশীল বণিক-সম্প্রদায়ের মধ্যে যিনি যুদ্ধে বিশেষ কৃতিত্ব দেখাইতেন, তাঁহাকে “বহরদার” উপাধি দেওয়া হইত।

 পূর্ব্বেই উল্লিখিত হইয়াছে যে চট্টগ্রামের অর্ণবযানগুলির উল্লেখ আমাদের পল্লীগাথাগুলির অনেকটির মধ্যেই পাওয়া যায়। ‘মইষাল বন্ধু’তে চট্টগ্রামের “মেঘুয়া” নামক এক দুষ্ট বণিকের বহু অর্ণবযানের উল্লেখ পাওয়া যায়। ‘ধোপার পাটে’ তমসা গাজির বালামী জাহাজ লইয়া চাউলের বিস্তৃত কারবারের কথা লিখিত আছে। ভেলুয়ার অনেক স্থলেই অর্ণবযানের উল্লেখ আছে। এই উপাখ্যানটিতে বণিকদিগের এক অদ্ভুত রীতির বিবরণ পাওয়া যায়—বণিকেরা কখন কখনও বঙ্গোপসাগরের মধ্যে তাঁহাদের অর্ণবযান লইয়া তাঁহাদের স্বগণসহ মহাসমারোহে বর ও কন্যার পরিণয়কার্য্য সমাধা করাইতেন। সম্প্রতি বিলাতে প্রণয়ী-যুগ্মের মধ্যে এইরূপ একটা খেয়ালের দৃষ্টান্ত সংবাদ-পত্রে পড়া গিয়াছে।

 “গৌরমণি মাঝির গান” এবং “স্বরূপ জেলের বারমাসী” দুইটি ক্ষুদ্র পালা গানে চট্টগ্রামের “গধু নৌকায়” সমুদ্রযাত্রী মৎস্যজীবিগণের মৎস্য ব্যবসায়ের বিবরণ আছে। এই দুইটি গীতি পরে প্রকাশিত হইবে।

 আমরা নিম্নে এই সকল অর্ণবপোতের কিছু কিছু বিবরণ লিপিবদ্ধ করিতেছি।

 ২। বালাম নৌকা।—এখন আমরা যে, ‘বালাম’ চাউল আহার করি, তাহা এই ‘বালাম’ নৌকায় আসিত বলিয়া তাহার এরূপ নামকরণ হইয়াছে। বালাম ডিঙ্গিই বাঙ্গলার অন্যতম সুপ্রাচীন অর্ণবযান। ইহা সাধারণতঃ পা’লের দ্বারা পরিচালিত হইত; ইহাতে ১৬টি দাঁড় থাকে। বালামী নামক কর্ণফুলীর তীরবাসী যোগী-সম্প্রদায় কর্ত্তৃক এই জাতীয় অর্ণবযান প্রস্তুত হইয়া থাকে। বর্ত্তমান সময়ে ও বালাম অর্ণবপথে ব্রহ্মদেশের আরাকান, কাইক্‌ফু প্রভৃতি বন্দরে ধান লইয়া বাণিজ্যার্থে গমন করে। সমুদ্রগামী বালামকে ৫০ টন (১৪০০ মন) পর্য্যন্ত মাল বহনের লাইসেন্স দেওয়া হইয়া থাকে। কিন্তু এখনও এই শ্রেণীর অর্ণবযান এত বড় হয়, যে তাহাতে ২।৩ শত টন মাল বহন করিতে পারে।

 ২। ‘গধু’ নৌকা—ইহাও সমুদ্রগামী সুপ্রাচীন অর্ণব যান; ইহা দৈর্ঘ্যে ২০।২৫ ফিট, বেধ ২” কি ২ ১/২” ইঞ্চি এবং পাশ ১৮” ইঞ্চি ব্যাপক বহু সংখ্যক “চাপ” বা বাঁক। কাষ্ঠ খণ্ড একত্র করিয়া রচিত হইয়া থাকে, ইহার তলানি (keel) অর্দ্ধচন্দ্রাকৃতি। ‘চাপ’ গুলি পেরেক দ্বারা আবদ্ধ হয় না;—গল্লাক নামক এক জাতীয় শক্ত বেতের দ্বারা জোড়া দেওয়া হইয়া থাকে। চাপের দুইদিকে “শ্যামা” নামক ছোট ছোট ছিদ্র থাকে। সেই ছিদ্রপথে বেত প্রবেশ করাইয়া জোড় দেওয়া হয়—দুই খানি চাপের মধ্যে যে কিঞ্চিৎ ফাঁক থাকে, তাহা উলুখড়ের শক্ত দড়ির দ্বারা বুজাইয়া দেওয়া হয়। শ্যামার (ছিদ্রের) ফাঁক পাট, তুলা ও ধূনা দিয়া বদ্ধ করা হয়। এই বেতের বাঁধা নৌকার জোড় এত শক্ত হয় যে ভয়ানক ঝড় তুফানেও তাহাতে বিন্দুমাত্র জল প্রবেশ করিতে পারে না। নৌকার জোড় গুলি চৈত্র মাসে খুলিয়া ডাঙ্গায় রাখা হয়, ভাদ্র মাসে জোড় দিয়া নৌকাগুলি পুনরায় সমুদ্রের যাতায়াতের জন্য প্রস্তুত করা হয়। চারপাঁচ মাসের খাদ্য দ্রব্য লইয়া “গধু” বঙ্গোপসাগরের লাক্ষ্মাদ্বীপ, মালদ্বীপ, সোনাদিয়া, লালদিয়া, রাঙ্গাবালী প্রভৃতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ সমূহে মৎস সংগ্রহ করিয়া বেড়ায়। শুক্‌না মাছ (হুট্‌কী) প্রচুর রূপে সংগৃহীত হয়—হুট্‌কীর অনেক নাম আছে যথা:—(১) বদরের ছুরি (২) ঘোয়রা (৩) ফাইস্য। (৪) লইট্যা (৫) রিশ্যা (৬) পাল্‌কা (৭) চাগাইছা। যখন এই সকল বিভিন্ন হুট্‌কী মাছের বিশাল ভাণ্ডার লইয়া ‘গধু’ চট্টগ্রামের বন্দরে ফিরিয়া আসে, তখন জেলেদের আত্মীয় স্বজন ঢোল, দগড়া, শানাই প্রভৃতি বাদ্য যন্ত্র উচ্চ রোলে বাজাইয়া প্রত্যাগত মৎস্যজাবিগণকে মহাসমারোহে অভিনন্দিত করিয়া থাকে। কর্ণফুলী নদী শত শত “গধুর” অভিনন্দন-জনিত বিপুল কলবাদ্যে তখন ধ্বনিত হইয়া—এক অদ্ভুত দৃশ্যের অবতারণা করে।

 ৩। সারেঙ্গ৷—একটি সুবৃহৎ পার্ব্বত্য বৃক্ষকে খুঁড়িয়া এই শ্রেণীর নৌকা তৈরী করা হয়, ইহাতে কোন জোড়া-তালি নাই।

 ৪। সাম্পান—ইহা চীন দেশীয় নৌকার অনুকরণ—দেখিতে অনেকটা হাঁসের মত। ইহা শুধু মাল বহনের জন্য।

 ৫। কোঁদা—ইহা রেড ইণ্ডিয়াণদের ‘কেনিও’ নৌকার মত—ইহা তরঙ্গের মধ্যে চলিতে পারে না—একস্রোতা নদীর মধ্যে লগি দিয়া ঠেলিয়া কোঁদা চালাইতে হয়।

 ৬। সুলুপ—বালাম নৌকাই পর্ত্তুগিজ অর্ণবযানের প্রভাবে সুলুপের আকৃতি ধারণ করিয়াছে। এই অর্ণবযানের কয়েকখানি চিত্র এই পুস্তকে দেওয়া হইল।

 ঊণবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে চট্টগ্রামে রামমোহন দারোগা, পিরু সদাগর নছুমালুম প্রভৃতি অনেকেরই অর্ণবযান ছিল। রামমোহনের জাহাজ স্কটলণ্ডের টুইড (Tweed) বন্দর পর্য্যন্ত সফর দিয়া আসিয়াছিল।

 বিগত মহাযুদ্ধর সময় চট্টগ্রামে আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রণালীতে অনেক গুলি জাহাজ নির্ম্মিত হইয়াছে। বালামীরাই এই সকল জাহাজ নির্ম্মান করিয়াছে। মিঃ উইলিয়ামস্ এবং লেফটেনাণ্ট উইলসন নামক জাহাজ নির্ম্মানাভিজ্ঞ পণ্ডিতদ্বয়—চট্টগ্রামে য়ুরোপীয় পদ্ধতিতে জাহাজ নির্ম্মান সম্বন্ধে অনেক সহায়তা করিয়াছেন। এইরূপ জাহাজের কতকগুলি চিত্র এই পুস্তকে দেওয়া হইয়াছে।[১]

৭ নং বিশ্বকোষ লেন
বাগবাজার, কলিকাতা
২রা জুলাই, ১৯২৬

শ্রীদীনেশচন্দ্র সেন

১ নং চিত্র—সমুদ্রগামী “গধু” ডিঙ্গি
২ নং চিত্র—চট্টগ্রামের চাক্‌তাই ঘাটে ‘সারেঙ্গা’ নৌবহর
৩ নং চিত্র—বালামীদের নির্ম্মিত অর্ণবযান—সুলুপ্ ডিঙ্গি
৪ নং চিত্র—বালামীদের নির্ম্মিত অর্ণবযান—সুলুপ্ ডিঙ্গি
৫ নং চিত্র—বালামীদের নির্ম্মিত অর্ণবযান—সুলুপ্ ডিঙ্গি
৬ নং চিত্র—বালামীদের নির্ম্মিত অর্ণবযান—সুলুপ্ ডিঙ্গি
৭ নং চিত্র—বালামীদের নির্ম্মিত অর্ণবযান—সুলুপ্ ডিঙ্গি
৮ নং চিত্র—বালাম নৌকা
  1. এই প্রবন্ধের উপকরণ সম্বন্ধে আমি আমাদের অন্যতম পালাগান সংগ্রাহক শ্রীযুক্ত আশুতোষ চৌধুরী মহাশয়ের নিকট বিশেষ সহায়তা প্রাপ্ত হইয়াছি। তিনি বহু কষ্টে অর্ণবযানগুলির ফটোগ্রাফ সংগ্রহ করিয়া পাঠাইয়াছেন। ইশাখাঁর কামানের দুইটি ব্লক (যাহা ১৯১০ খৃঃ অব্দের এসিয়াটক সোসাইটির জারনালে ছাপা হইয়াছিল) আমাকে সোসাইটির অধ্যক্ষ শ্রীযুক্ত ডাক্তার জন, ভ্যান, মানেন মহোদয় প্রদান করিয়া বাধিত করিয়াছেন। তিনি সোসাইটির জারনালে প্রকাশিত—ইশাখাঁর নামাঙ্কিত কামানের চিত্রের প্রতিলিপি এই পুস্তকে প্রকাশ করিবার অনুমতি দিয়া ও আমার ধন্যবাদভাজন হইয়াছেন।

শব্দ সূচী

শব্দসূচী

অদুনা—১৪, ১৮, ২১
অধর চান্দ—২২১, ২৩০
অধুয়াসুন্দরী—৩৯, ৪১২—৪১৬, ৪২৬—২৭, ৪৩০—৩১
অলঙ্ঘ্যার চর—২০৫

আউলিয়া—৩৪৫—৪৬
আকবর সা—৩৬৪
আগ্রা—৪৫৫
আদম খাঁ—৩৭২, ৩৭৬, ৩৮৪, ৩৮৯
আবদুল্লা—৩২৩
আবুরাজা—১৬৭, ১৮১, ১৮৩, ১৮৫, ১৯১—৯৩, ১৯৮—২০০, ২০৫
আব্দারপুর—৩১৮
আমিনা—৩২৩
আমির—২৩৯
আরঙ্গের দেশ—৫৪
আলাপসিং—৩৬৬
আলাল খাঁ—৩৯৪—৯৯, ৪০১, ৪২১—২৪, ৪২৭, ৪২৯, ৪৩১
আলী—৩২৪
আল্লা—২৩৩, ২৩৬, ৩৯৩, ৩৯৪, ৪০১, ৪১৮—১৯, ৪২২, ৪২৮—২৯, ৪৩২, ৪৩৫, ৪৪৩, ৪৪৬, ৪৭৮
আল্লাজী— ৪৩৪, ৪৩৫, ৪৫৯
আষাঢ়্যা (মণ্ডল)—৪৫, ৪৯—৫১

ইচ্ছামতী—৩২৪
ইন্দ্র—২৭৪
ইন্দ্রপুরী—২৮৬, ২৯০—৯১, ২৯৪, ২৯৭, ৩০৯—১০
ইব্রাহিম ওল ওলমা—৩৫৮
ইশাখাঁ (দেওয়ান মসনদালি)—৩৪৭, ৩৪৯, ৩৫৯—৬৬, ৩৭১—৭৪, ৪৩৬, ৪৪০

উজানী—১৪১, ১৪৯, ১৫২, ১৫৪, ১৫৭—৫৮, ১৬৫—৬৬, ২০৩—০৪, ২০৬
উমর খাঁ — ৪৪২, ৪৪৮, ৪৫২, ৪৫৯—৬০, ৪৬২, ৪৬৬—৬৭, ৪৭৫

ঊষা—২২৮

এগার সিন্দুর—৩৬৩

কওলা—১৩৬
কমলারাণী—২০৯, ২১১, ২১৩, ২১৫—১৭, ২২১, ২২৩, ২২৫, ২২৭, ২২৯
করিমুল্লা—৩৭৬, ৩৭৯—৮০, ৪৮২
কল্পতরু—১২৯
কাউচার বাঁক—১৮৫
কাঙ্গুরাজা—৭৬, ৭৭
কাঞ্চন—৩, ৫, ৬, ১৩, ২৪, ২৫, ২৭
কাঞ্চন নগর—১৪৩, ১৪৬, ১৬০—৬১, ১৬৭, ১৭৫, ১৯১, ১৯৫, ২০৪
কাঞ্চনপুর—১২৭
কাঞ্চনমালা—[১০, ১২, ২৪, ২৭]; ৭৯, ৮১—৮৩, ৮৫, ৮৭, ৮৯, ৯১, ৯৫—১০৩, ১০৫—০৯, ১১১—১৭, ১১৯—২০
কাটরার—৩৩৬
কানু—২৩৯—৪০, ২৪২—৪৬, ২৫০, ২৬৯—৭১, ২৭৪, ৩২৩, ৩৩৫
কাপ্তান—৩১৫
কামটুঙ্গী ঘর—৫৪
কার্ত্তিক—১৫৯
কালাপাহাড়—৩৫৮
কালিদাস (গজদানী)—৩৫০—৫১, ৩৬৪, ৩৫৬—৫৮
কালী—৩৮৫
কালীমা—৩১৮
কালুচোরা—২৭৮, ২৭০—৭৪
কালুসেখ—৩১৭
কাশী—৮৮, ৯০, ২৭৭
কিতাব কোরাণ—৩২৩
কুঞ্জলতা—৯৯, ১০১, ১০৪, ১০৮
কুঞ্জমালা—১০১—০২, ১০৪—০৬, ১১২, ১১৪, ১১৭, ১২০
কুড়াল্যামুড়া—৩২৫
কুড়িখাট—৩৬৬
কুমরাবাদ—৩১৭
কুশাই—২৩৭
কেদার রায়—৩৬৭, ৩৭১, ৩৭৩, ৩৭৬—৮১, ৩৮৫—৮৬
কেরামুল্লা—৪৩১
কেল্লাতাজপুর—৪৪২, ৪৪৬—৪৭, ৪৫১, ৪৫৩, ৪৫৭, ৪৫৯, ৪৬২—৬৩, ৪৬৯, ৪৭১—৭২, ৪৭৪—৭৬
কৈলাস পর্ব্বত—২৭৭
কোকীগাঢ়দেশ—৭৫, ৯৮
কোম্পানী—৩১৩
কৌশল্যা—১৩৭

খইরা—২৬৮
খাল্যাজুড়ি—৩৬৬

গঙ্গামণ্ডল—৩৬৬
গজদানী—৪৩৫
গজমতী হাতী—১২৪
গণেশ্বর—১২৯
গদাধর—১৩৬
গয়া—৮৮, ৯০, ২৭৭
গয়ারাম—৩১৪
গয়াসুদ্দীন—৩৪৯—৫০
গোঞ্জেরঘাট—২৩৫, ২৩৭, ২৫৪—৫৫
গোঞ্জের হাট—২৩৫
গোধা—১১
গৌড়— ৩৪৯—৫০, ৩৫২, ৩৬০
গৌরীদান—৯০

চণ্ডী—১৩৪, ২৫৪, ৪৩
চণ্ডীদাস—৭, ৮, ১৩, ২৬, ২৭, ১২০, ১৪৪
চাটি গাঁ—৩৬১
চাডিগাইয়া—৫৩, ৭১, ৭৬
চান্দ সদাগর—১৪৪, ১৫৯
চৌগঙ্গা—১৯০

জঙ্গলবাড়ী—৩৬৬, ৩৭৩, ৩৭৯, ৩৮২—৮৩, ৩৮৬—৮৬, ৩৮৮, ৪৩৬—৪৮, ৪৫৫—৫৬, ৪৬২—৬৬, ৪৬৮—৬৯, ৪৭৩—৭৭
জঙ্গলী পাতসা—৩৩৪—৩৫
জজসাহেব—২১৬—১৭
জঙ্গী—৩১৬
জব্বর—৩৩৫—৩৮
জমীদার—১০, ৪৩, ৪৪, ৬৬
জয়ধর বানিয়া—১৩৮
জয়রেসাই—৩৬৬
জলটুঙ্গী—১৯৯, ২২২
জামাইত উল্লা—২৬৯
জামাল খাঁ—৪০৪—৪১১, ৪১৩, ৪১৬—৪৩১
জাহ্নবী—২১৯
জেলাল উদ্দিন—৩৫২
জৈনুদ্দিন—৩৫০
জৈতাশ্বর (জৈতার সহর—১৭৩, ১৭৬—৭৯, ১৮১, ১৮৩, ১৯০—৯১, ২০২, ২০৬
জৈন্তার পাহাড়—১৪২
জোড়মন্দির ঘর—২২২, ২৮৪—৮৫
জোয়ানসাহী—৩৬৬

ডিঙ্গাধর—৩১, ৩৩—৩৬, ৪৩, ৪৬—৪৯, ৫১—৫৬

তামূসা গাজী—২১, ২২
তারামণি—২৬৪
তিন কড়ি—২৪৮—৪৯
তেড়ালেঙ্গড়া—৩৯৫, ৪০৫

দক্ষিণবাগ—৪১৩—১৫, ৪১৮, ৪২০, ৪২৯
দণ্ডধর—২৮৬
দরগা মুন্সী—৩১৪
দরজীবাজু—৩৬৬
দরিরা—৪৭০
‘দশকাউনা’ (দশকাহনিয়া)—২৩৬
দশরথ—২৩৮
দাউদ খাঁ—৩৫৯
দারু—২৫৬
দাসু—২৩৭
দিগাড় জঙ্গল—৩২৬—২৭, ৩৩০, ৩৪০, ৩৪৩
দিল্লী—৩৫৯, ৩৬৩—৬৪, ৩৬৬, ৪২৪, ৪৩৬, ৪৩৮, ৪৪০—৪১, ৪৫৫
দুর্গা—৯০, ৯৯, ১৩৬
দুর্গারাণী—১৮৯
দুলাল খাঁ—৩৯৪, ৪০০—৪০৩, ৪০৯, ৪২৮
দুলু—২৭৩—৭৪
দুবরাজ—৪০৫, ৪০৬, ৪১২, ৪১৮, স২১, ৪২৪, ৪২৯, ৪৩১—৪৩২

ধনঞ্জয়—১৮৪, ১৯১, ২০৬
ধনপৎ সিং—৩৪৯
ধোপার পাট—১, ৩......অযুগ্ম সংখ্যক পৃষ্ঠা সমুহ)—২৭ অবধি।

নবদুর্গা—৮৫
নবি—৩২৩
নাসিরুজ্যাল—৩৬৬
নাটের খুতি—২৬৮
নিজাম (ডাকাইত)—৩২১, ৩২৩, ৩২৫—২৬, ৩২৮, ৩৩০—৩১, ৩৩৪, ৩৩৯—৪১, ৩৪৩— ৪৬
নিজামুদ্দীন—৩৪৬
নিয়ামত জান—৩৭১, ৩৭৯
নিরঞ্জন—২৩৩, ২৭৭, ৩৯৩, ৪৩৫
নীলা—১৩১, ১৩৩, ১৩৮
নুর—৩২৩
নোয়াপাড়া—৩২৪

পঞ্চ—২৬১, ২৭০
পদ্মা—১৮৯, ১৯১, ৩৬৭, ৩৭০, ৩৮২
পলাশবাড়ী—২৬৯
পাইট কাড়া—৩৬৬
পাটেশ্বরী পুষ্কুন্নী—২১৭
পেরেরপুর—৩২৪

ফইজু ফকির—৩৯৩, ৪১৭, ৪২৮, ৪৩২
ফতেমা বিবি—৩২৪, ৩৯৪, ৪০৩, ৪০৭, ৪২৮
ফিরোজ খাঁ (দেওয়ান)—৪৩৩, ৪৩৫, ৪৩৭—৩৮, ৪৪৪—৪৫, ৪৪৭, ৪৫২, ৪৫৬—৫৮, ৪৬১, ৪৬৩, ৪৬৫, ৪৬৭, ৪৬৯, ৪৭৪, ৪৭৮
ফিরোজা (সুন্দরী)—৪৫৮, ৪৬২
ফুলকুমার—৯৬, ১০২, ১০৬, ১০৯, ১১৪
ফুলটুঙ্গী (ঘর)—৬৫

বড়পীর সাহেব—৩২৪, ৩৪২—৪৪
বনদুর্গা—৫৭
বন—লক্ষ্মী—১৩৩
বরদা খাত—২৬৬
বরদা খাতমনরা—৩৬৬
বরমপুত্তুর—২৩৪, ২৩৬
বলরাম—৩২, ৩৪—৩৬, ৪৬, ৪৮
বলাই—৪৩
বাগুয়া—১১
বানিয়াচঙ্গ্ (বান্যাচঙ্গ্)—৩৯৪, ৩৯৭, ৪১১, ৪১৪, ৪১৯—২২, ৪২৮, ৪৩০, ৪৩২
বারদুয়ারী ঘর—২২২
বারবাংলার ঘর—২১১, ৩৬২, ৪৩৭—৩৮
বাশকুলী—৩১৪
বাসু—২৩৭—৫২, ২৫৫—৫৬, ২৫৮, ২৬৫—৬৬, ২৬৯—৭২
বাহাটিয়া—১২৯
বাহাদুর শাহা—৩৫২
বিন্দাবন—৩২৪
বিরাম খাঁ—৩৭২, ২৭৭, ৩৮৪, ৩৮৯
বিশু (নাই, শীল)—২৩৭—৩৮, ২৫৪
বীরসিংহপুর—৩১৮
বেচারাম—৩২৪

ভগমান (রাজা)—১১
ভগীরথ—৩৪৯—৫০
ভরাই নগর—৮৩, ৯২, ১৩৭
ভাওয়াল—৩৬৬
ভেলুয়া—১৩৯, ১৪১-৪৬, ১৫০, ১৫৩-৫৬, ১৬১-৬২, ১৬৪-৮৭, ১৯০-৯১, ১৯৩, ১৯৬-৯৮, ২০১০৪, ২০৬-০৭
ভবানী—১৩৬, ১৭৪

মইনা—৭৪, ৭৬-৭৮
মইষাল—৩৮, ৩৯, ৪২, ৪৩, ৫০, ৫২, ৬১, ৬২, ৬৫—৬৮, ৭২, ৭৮
মইষাল বন্ধু—২৯, ৩১...(অযুগ্ম পৃষ্ঠা)...৭৭
মক্কা—৩২৩, ৪২০, ৪২৮, ৪৩২
মথুয়া—৫৩-৫৭, ৭১-৭৮
মদন—১৪১, ১৪৫, ১৪৮-৫০, ১৫২, ১৫৪, ১৫৬, ১৫৮, ১৬০, ১৬৬-৬৯, ১৭২-৭৫, ১৭৭, ১৮০, ১৮২-৮৭, ১৯৩-৯৪, ২০২-০৩, ২০৫-০৬, ৩৫১
মদনকুমার—২৭৫, ২৭৭, ২৮৪-৩১
মদিনা—৩২৪
মধুমালা—২৭৫, ৪৭৭, ২৮৪—৩১০
মমিনা খাতুন—৩৫২, ৩৫৫, ৩৫৮-৫৯
ময়মনসিংহ—৩৬৬
ময়মনসিংহবাসী—৯৪
মরিচাপুর—১৩৬
মসনদালি—৩৬৬
‘মসনদালি ইতিহাস’—৩৫৮
মহেশ্বরদি—৩৬৬
মাইন্দা—২৫১
মাণিক (সদাগর)—১৪৩, ১৪৫, ১৫২, ১৭৫, ১৮৫
মাণিকতারা—২৩১, ২৩৩, ২৫১, ২৫৪-৫৬, ২৬০-৬৩, ২৬৫-৬৮, ২৭২-৭৪
মানসিংহ—৩৬৩-৬৫
মালদহর বৈঠালি—১৭৩, ১৭৬, ১৯৪, ২০৬
মুরারি (মুরাই, সাধু) ১৪১-৪২, ১৪৯, ১৫২, ১৫৪, ১৫৮-৬০, ১৬৬
মেনকা—১৭৮-৭৯, ১৮১, ১৮৪-৮৬, ১৯৬-২০০, ২০৩, ২০৬
মৌরক্ষী—৩২৩, ৩২৫

রঘুনাথ—৩২৫
রঙ্গ মিয়া—৪৭৮
রছুল—২৩৩, ২৩৬, ৪২৪
রতি—১৫৬, ৩৪১
রবিকুল—৩২৩
রসুয়া (ঘটক)—৪৯-৫১
রাউন্যা—৩০৪
রাখাল রাজার দীঘি—২৬৮-৬৯
রাধা—৩৯, ৬৪, ৩৮৪
রাধাকৃষ্ণ—৮
রাম (কোঁচ)—৩৬, ৩৬২, ৪৩৭
রায় কৃষ্ণদাস—৩১৮, ৩১৯
রাংচাপুর—১৬৬-৬৭, ১৭৯, ১৯৩, ১৯৫
রক্মিণী—১৫-১৮, ২৭

লঙ্কা—৩১৭
লছ্‌মী—১৫
লক্ষ্মণ (কোঁচ)—৩৬১-৬২, ৪৩৭
লক্ষ্মী—৩২, ৯৫
লক্ষ্মীন্দর—১৫৯
লাউজুর—৩১৭
লাউর—৪৩০
লাঙ্গুল—৩২৪
লালবাঈ (লালী)—৩৩৫-৯৭
লেংরা—৪০৮, ৪০৯, ৪২৯

শঙ্কর—১৯৬-৯৭
শঙ্খনদী—৩২৫
শঙ্খপুর—১৪১, ১৪৯, ১৫২, ১৫৪, ১৫৭-৫৮, ১৬৫-৬৬, ২০১, ২০৪, ৩০৬
শনি—৮৫, ২৪২
শম্ভু জাইলা—২৪৫-৪৬
শান্তি—১২১-২২, ১২৪-৩০
শিঙ্গাখালি—৩১, ৪৭
শিঙ্গাপুর—৩২
শিব—৭৫, ২১৭
শুভবাবু—৩১৬, ৩১৬
শ্রীদুর্গা—৪৪, ১৭৩
শ্রীপুর—৩৬৭, ৩৬৯, ৩৭৮-৭৯, ৩৮৩, ৩৮৫-৮৮
শ্রীরাম—১৪

সখিনা—৪৪৭-৫৫, ৪৫৪, ৪৫৯-৬০, ৪৬২, ৪৬৪-৬৫, ৪৭-৭১, ৪৭৩, ৪৭৬
সত্যপীর—৩১৭
সলুকা—১৬০-৬৩, ১৭৫-৭৬, ১৯৪-৯৭, ২০০, ২০২, ২০৪, ২০৭
সাঁওতাল-৩১১, ৩১৩-১৯
সাজুতী—৪৩, ৪৭, ৪৯, ৫০, ৫২, ৫৩, ৫৫, ৫৬, ৫৮, ৭৮
সাদীপুর—৩১৪
সাধুদাস—৩১৭
সাধুশীল—১৫১, ২৫৪, ২৬০
সাহেবাজ খাঁ—৩৬০
সাহেব-৩১৮
সিউড়ী—৩১৬
সিপাই-৩১৪, ৩১৫, ৩১৬, ৩১৮
সিংধা—৩৬৬
সীতা—৫৮, ৩১৪
সুন্দা মেথীর দেশ—৯৮
সুভদ্রা—৭১
সুমাই—৯৯
সুমারু—২৬৫
সুরত জামাল—৩৯১, ৩৯৩, ৩৯৫, ৪০০, ৪০৪
সুর্ম্মাই—৪৭, ৫৩, ৬১, ৬৮
সুয়াদাসী—২২৬, ২২৯
সেখ ফরিদ—৩২৭, ৩৩১-৩৩, ৩৩৯-৪১, ৩৪৫-৪৬
সেরপুর-২৩৬, ৩৬৬
সোণা মাঝি—২৪৫
সোন্দর কুমার—৩৪২, ৩৪৪, ৩৪৬
সোলেমান (খাঁ)—৩৫৮-৫৯
স্বর্ণগ্রাম—৩৬৬

হজরত—৩৯৮
হনুমান—৩১৭
হরি—২৩৬, ২৬২, ৩১৯
হাইলা বন—৩৯৭, ৪০৮
হাজরাদি—৩৬৬
হাতেম—৩৯৪
হানিপা—৪৭৪
হালুয়ানী—৩৪১-৪৬
হীরণ—১৭৩, ১৭৬-৭৭, ১৮০-৯৪, ১৮৬-৮৭
হীরামণ—১৪৯, ১৫২
হির্ম্মাই—৩২৫
হুসেনপুর—৩৬৬
হেমন্ত—৩২৪

ক্ষ

ক্ষীরন্দী (ক্ষীরনদী)—২০৪, ২০৫, ৩২৪

এই লেখাটি ১ জানুয়ারি ১৯২৯ সালের পূর্বে প্রকাশিত এবং বিশ্বব্যাপী পাবলিক ডোমেইনের অন্তর্ভুক্ত, কারণ উক্ত লেখকের মৃত্যুর পর কমপক্ষে ১০০ বছর অতিবাহিত হয়েছে অথবা লেখাটি ১০০ বছর আগে প্রকাশিত হয়েছে ।