"অর্"ই ঋ-কারের আদিম উচ্চারণ বলিয়া মনে হয়। একে "অর্" ঠিক 'র' নয়, তাহার পরে আবার অন্তঃস্থ বর্ণগুলি যে ব্যাকরণের বৈজ্ঞানিক নিয়মের প্রভাবে সৃষ্ট নূতন বর্ণ মাত্র, তাহাও দেখাইতেছি।
এই প্রসঙ্গে একথাও বলিয়া রাখি, ঋ-কারের অর্ উচ্চারণ ছিল মনে করিয়া লইলে বৈদিক ব্যাকরণের দুই একটি স্থলের ঋ-কারের বিকৃতি স্বাভাবিক নিয়মে ধরিতে পারা যায়; তাহার জন্য সূত্র গড়িতে হয় না। পাণিনির "বিভাষর্জোশ্ছন্দসি" সূত্রের ব্যাখ্যায় পাই যে, বৈদিক ভাষায় যদি ইষ্ঠ, ইমন্, ঈয়স্ প্রত্যয় পরে থাকে, তাহা হইলে "ঋজু"র ঋকার র হইয়া যায় (সিঃ কৌঃ বৈদিক প্রকরণ ৩৫৫৫ সূ)।
অন্তঃস্থ বর্ণগুলি (অর্থাৎ য, র, ল, ব) যে মৌলিক বর্ণ নয়, স্বরমিশ্রণে উৎপন্ন, তাহা দেখাইতেছি। "য"এর উচ্চারণ হইল "ইঅ"; বাঙ্গালা এবং ওড়িয়া ছাড়া এখনো সর্ব্বত্রই ঐ প্রকার উচ্চারণ হইয়া থাকে। আমরা 'য'এর 'জ' উচ্চারণ করি বলিয়া, "ইঅ" উচ্চারণের জন্য 'য'এর নীচে ফোঁটা দিয়া থাকি। "উহ্য" শব্দটিকে আমরা উচ্চারণ করি, "উজ্ঝ," আর অন্য প্রদেশে উহার উচ্চারণ "উ-ই-হ"। ই + অ উচ্চারণ সংযোগে যেমন 'য,' উ + অ উচ্চারণ সংযোগে ঠিক তেমনি অন্তঃস্থ ব। সন্ধির সূত্রগুলিতেও, য এবং ব কেবল উক্ত স্বর সংযোগ, আর কিছু নহে।
যে নিয়ম য এবং ব সম্বন্ধে খাটিতেছে, ঐ নিয়মেই র, ল শাসিত। 'ঋ'র পরে স্বরবর্ণ থাকিলে যখন 'র' হয়, তখন 'র'কারের উৎপত্তি 'য' এবং 'ব'এর মত বলিয়া মনে করা সঙ্গত। এরূপ অবস্থায় ঋ এবং ঌ-কারের প্রাচীন কালের যেরূপ উচ্চারণ ছিল বলিয়া মনে করিয়াছি, তাহা সঙ্গত হইবার সম্ভাবনাই খুব অধিক।
যখন দুইটি স্বর বা আওয়াজ মিলিলে একটা স্বাভাবিক মিশ্র আওয়াজ হয়, তখন শেষের আওয়াজটি বেশী তীব্র হইলে প্রথম আওয়াজটিকে একেবারে ঢাকিয়া ফেলিবে, আর বেশী তীব্র না হইলে প্রথম স্বরটিকে একটুখানি হ্রস্ব বা মন্দীভূত করিয়া দিবে। কারণ দুটি স্বর সমান প্রাধান্য রাখিয়া উচ্চারিত হইতে পারে না। একারের উচ্চারণ অ + ই জাত