ফেলিয়া দেখাইতেছি যে, উচ্চারণের রীতি ধরিয়া লইলে বিনা সূত্রেই বিসর্গ সন্ধির সূত্র অধীত হইতে পারে। সূত্রের সুবিধার জন্য প্রথমতঃ বর্ণমালা হইতে ক খ এবং প ফ দূরে রাখিয়া দিব। বিসর্গের সাধারণ মূর্ত্ত উচ্চারণ 'স্'। প্রথমতঃ ঐ বিসর্গের পর চ, ছ; ট, ঠ; ও ত, থ থাকিতে পারে। তিনটি 'স' এর generalised একটা কিছু উচ্চারণ নাই বলিয়া কথাটা লিখিয়া বুঝাইতে কষ্ট হইতেছে। সেই তিন 'স' এর এক অভেদ মৌলিক আত্মাটি, চ, ছ-যুক্ত হইলেই 'শ' হইয়া ফুটিয়া উঠিবে; ট, ঠ যোগে ষ এবং ত, থ যোগে 'স' হইবে। উপরের বর্ণিত উচ্চারণ থেকেই ইহা সুস্পষ্ট হইবে। সূত্রের প্রয়োজন নাই। (২) বিসর্গের পর শ, ষ, স থাকিতে পারে। এস্থলে সমান শ্রেণীর আওয়াজে মিলিয়া অন্য সন্ধির মত আওয়াজ ডবল হইবে মাত্র, উহার বিকৃতি হইবে না। বিকল্পে বিসর্গ বজায় থাকার নিয়ম, আওয়াজের হিসাবে অর্থশূন্য। এখন বাকি রহিল ব্যঞ্জনের মধ্যে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম বর্ণগুলি এবং য র ল ব হ। উহাদিগকে গ হ নাম দিয়া অন্যবিধ শ্রেণী বিভাগে ফেলিতেছি। বিসর্গ 'অ'কারের পর, 'আ'কারের পর, অথবা অন্যান্য স্বরের পর থাকিতে পারে; এবং বিসর্গের পর 'অ,' অথবা 'আ,' অথবা অন্যস্বর, অথবা ব্যঞ্জনের তৃতীয় চতুর্থ পঞ্চম বর্ণ ও য র ল ব হ (গ-হ) থাকিতে পারে।
(৩) অর্ব্বাচীন সংস্কৃতের পূর্ব্ববর্ত্তী প্রাকৃতে (অর্থাৎ পালিভাষায়) দেখিতে পাই যে, সকল অকারান্ত শব্দই কর্ত্তৃকারকে বা প্রথমার একবচনে ওকারান্ত হইয়া উচ্চারিত হয়; যেখানে সংস্কৃতের হিসাবে বিসর্গ থাকিবার কথা এবং না থাকিবার কথা, এ উভয় স্থলেই ঐরূপ উচ্চারণ হয়। নরো, নিব্বুতো, ধম্মো, কম্মো ইত্যাদি। একালের প্রাকৃতগুলির মধ্যে কেবল বাঙ্গালায় প্রাচীন প্রাকৃতের ও-ঘেঁষা উচ্চারণ রক্ষিত আছে। পালি উচ্চারণ বৈদিক সময়ের উচ্চারণের অনুরূপ ছিল বলিয়া মনে করিবার অনেক কারণ আছে। সংস্কৃতের ব্যাকরণের নিয়ম অপেক্ষা, পালির ব্যাকরণের অনেক নিয়ম বা রীতি, বৈদিক ভাষার বেশি নিকটবর্ত্তী। বৈদিক ভাষার পরবর্ত্তী ব্রাহ্মণযুগের ভাষার সহিত পালির ব্যাকরণের মিল অতিশয় অধিক। সন্ধির নিয়ম হইতে প্রথমে দৃষ্টান্ত